
এম বশর চৌধুরী উখিয়া:
উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া মানব পাচারের জন্য কাটাখালীর গভীর বনাঞ্চল ও মনির ঘোনা এলাকার একটি বাড়ীতে ওই এলাকার কুখ্যাত মানব পাচারকারী কোরবান আলী এবং তার সহযোগী দালালরা বহিরাগত লোকজন জড়ো করার অভিযোগ উঠেছে। ওই এলাকার বৌদ্ধ বিহার হামলা সহ বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামী এক নেতার ছত্রছায়ায় থেকে ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কতিপয় পাতি নেতাদের ম্যানেজ করে সে দীর্ঘ দিন ধরে মানব পাচার ও ক্রীত দাশের ব্যবসা করে আসলেও টেকনাফ থানা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপরে রহস্য জনক কারনে নিরব ভুমিকা পালন করছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন কুখ্যাত এ মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মানব পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য এবং চিহ্নিত দালালদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি উক্ত কোরবান আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর উক্ত পাচারকারী কৌশল পরিবর্তন করে নিরাপদ আস্থানা হিসাবে বন বিভাগ থেকে তার নামে বরাদ্ধপ্রাপ্ত কাটাখালী এলাকার সামজিক বনায়নের প্ল¬ট কে নিরাপদ স্পট হিসাবে ব্যবহার করছেন। উক্ত কোরবান আলী তার ব্যবহারের মোবাইল নং- ০১৮১৫-৯১৪৯৩৯ এবং তার স্ত্রী রোহিঙ্গা হাসিনা বেগমের ব্যবহারের মোবাইল নং- ০১৮৩৮-১৪৩২৪৯ থেকে বিভিন্ন পাচারকারী দালালদের সাথে আলাপ করে বহিরাগত লোকজন সংগ্রহ করে পাচারের জন্য জমায়েত করছে। বর্তমানে তার নিয়ন্ত্রনে বহিরাগত অন্তত ২০ জন লোক রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, টেকনাফ উজেলার কাটাখালী মনির ঘোনা এলাকার মৃত নাজির হোছনের ছেলে কোরবান আলী (৪০) এক সময় অবৈধভাবে কাঠ ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করত। গত এক বছর পূর্বে তার এক ছেলে সাগর পথে মালয়েশিয়া চলে যায়। সুচতুর উক্ত ছেলে মালয়েশিয়া মানব পাচারের তথা কথিত গোদামের অন্যান্য দালালের মত একজন চিহ্নিত দালাল। কোরবান আলীর ছেলে মালয়েশিয়া গোদামের (পাচার হওয়া লোকজনদের মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জমায়েত করার স্থান) চিহ্নিত দালাল হওয়ায় উক্ত কোরবান আলীর কদর বেড়ে যাওয়ায় বহু গুণে। তার কথায় গভীর সাগরে থাকা মালয়েশিয়ার যাত্রী বোঝাই জাহাজ, জাহাজের মাঝিমাল্লা এবং দালালরা নিয়ন্ত্রিত হয়। গত এক মাসে উক্ত কোরবান আলী টেকনাফ উপজেলার কাটাখালী, ঘোনার পাড়া, মনির ঘোনা, উলুবনিয়া, খারাইঙ্গাঘোনা, ডেইঙ্গা কাটা, হোয়াইক্যং, উখিয়া উপজেলার পালংখালী, রহমতের বিল, মোছারখোলা, আনজুমান পাড়া, পাতাবাড়ী সহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েক শতাধিত লোক সংগ্রহ করে কিছু কিছু লোকদের ফুসলিয়ে আবার কিছু লোকদের জিম্মিকরে টেকনাফের সহপরীর দ্বীপ ঘাট সহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাচার করে দেয়। তৎমধ্যে অনেক লোক একনো নিখোজ রয়েছে এবং কিছু লোক মুক্তিপনের টাকার জন্য বন্দিশালায় আটক আছে। পরবর্তীতে পাচার হওয়া উক্ত লোকদের মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডের গোদামে (পাচার হওয়া লোকজনদের মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জমায়েত করার স্থান) আটক রেখে মারধর সহ অমানুষিক নির্যাতন ও কান্নাকাটির খবর অভিবাবকদের শুনাইয়া মুক্ত করার জন্য জনপ্রতি ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে শুরু করে ২লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। এভাবে উক্ত কোরবান আলী গত এক মাসের ব্যবধানে কমপক্ষে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কাটাখালী ও মনির ঘোনা এলাকার একাধিক মানুষ অভিযোগ করে জানান, কোরবান আলী মালয়েশিয়ার দালাল হিসাবে কাজ করার পর থেকে তার চাল চলনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রায় সময় নিজেকে তাবলীগ জামায়াতের লোক পরিচয় দিয়া থাকে। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের গোদামে আটক থাকা লোকের অভিবাবকদের নিকট থেকে কাটাখালী, মনির ঘোনা ও হোয়াইক্যং এলাকার বিভিন্ন মসজিদে বসে টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। অসহায় অভিবাকরা নিজেদের আদরের সন্তানদের মুক্ত করার জন্য সহায় সম্বল বিক্রি এবং ছড়াসুদে টাকা ধার নিয়ে তুলে দিচ্ছে উক্ত দালালের হাতে। যার কারনে উক্ত এলাকায় বর্তমানে ঘরে ঘরে চরম অভাব অনটন বিরাজ করছে। সহায় সম্ভল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেকে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, কোরবান আলীর অন্যতম সহযোগী হিসাবে কাজ করে সম্প্রতি ডিবি পুলিশের হাতে আটক হওয়া উখিয়ার সোনার পাড়া গ্রামের রেবি ম্যাড়াম, চেপটখালীর ফয়েজ সিকদার, আবুল কালাম, মনখালীর আবছার প্রঃ ধইল্যা, কাটাখালী পূর্ব পাড়া গ্রামের মৃত ওয়াজ উদ্দিন ফকিরের ছেলে আবু তাহের প্রঃ তাহের ডাকাত, টেকনাফের সাদ্দাম, নাজির পাড়া গ্রামের মৃত মনি উল¬্যাহর ছেলে কামাল (৩০), কলিম উল্যাহ সওদাগরের ছেলে তোফাইল, আব্দুল হাই প্রঃ আব্দুল খাইর, মোঃ ভুট্টো, শাপলাপুর পুরান পাড়ার শফি উল¬্যাহর ছেলে আশিক উল্য¬াহ (২০), শহীদুল¬্যাহ (৩২), মৃত হাবিব উল্য¬াহর ছেলে শফি উল¬্যাহ (৬০), কাটাবনিয়া গ্রামের ছৈয়দ আহম্মদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, মৃত লাল মিয়ার ছেলে মোঃ রফিক, আব্দুল মাজেদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, মোজাহের মিয়া, বাহারছড়া হলবনিয়া গ্রামের জাফর আলমের ছেলে নবী হোছন (৩৮) তার পিতা জাফর আলম (৬০) শামলাপুর পুরান পাড়ার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে শফি উল¬াহ (৫৫) রতœাপালং ইউনিয়নের গয়ালমারা গ্রামের রোস্তম আলী বৈদ্যের ছেলে আনোয়ার ইসলাম প্রঃ আনোয়ার ড্রাইভার ওরপে ডঙ্গী আনোয়ার, পূর্ব সোনার পাড়া বড় পাড়ার হাজী হোছন আলীর ছেলে আব্দুর রশিদ, সোনার পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পার্শ্বে বাড়ী বদিউল আলমের ছেলে নুর হোছন, পূর্ব সোনার পাড়া গ্রামের কালা মন্টুর ছেলে নুরুল কবির, সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে রোস্তম আলী, সোনার পাড়া গ্রামের অজি উল্যাহর ছেলে কাউছার আহম্মদ জনি, ওমর সওদাগরের ছেলে আলমগীর হোছন রানা, পশ্চিম সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত রশিদ আহম্মদের ছেলে সাগর, আবু ছৈয়দের ছেলে মাহাদু, নুর মোহাম্মদের ছেলে আহম্মদ শরিফ, মৃত হোছন আলীর ছেলে শাহ আলম, মৃত রশিদ আহম্মদের ছেলে আব্দুল¬াহ, আব্দুল জলিলের ছেলে লাল মাঝি, মৃত মোজাফ্ফর আহম্মদের ছেলে রাসেল, ফজল আহম্মদের ছেলে শামশু আক্তার, উত্তর সোনাইছড়ি গ্রামের হাবিব উল¬াহর ছেলে জয়নাল উদ্দিন জুনু, আমির হামজার ছেলে ছৈয়দ আলম, সুলতান আহম্মদের ছেলে মুজিবুল হক, চেপটখালীর আবুল কালাম মনখালীর বক্কর ডাকাত, নুরুল আবছার ধইল্যা, বশরত আলীর ছেলে মোহাম্মদ হোছন প্রঃ ফেসুক্রুরী (৪৫), মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দু রাজ্জাক (২৮), মোঃ ফয়সাল (৩২), মোহাম্মদ হোছন (৩৫), তোফাইল আহম্মদ, বাহাদুর, কামাল উদ্দিন, গোলাম শরিফের ছেলে নুরুল বশর, মাদারবুনিয়ার শফিকুর রহমানের ছেলে আব্দুল জলিল (২৫), মোঃ ইউনুছের স্ত্রী রোকসানা আক্তার, মোঃ জাফরের ছেলে আব্দুল জলিল, মোজাহের মিয়ার ছেলে মোঃ উল্যাহ, চোয়াংখালী গ্রামের, বর্মাইয়া হাশেম মাঝি, শামশুল আলমের ছেলে রুবেল, আবুল কাছিম প্রঃ সুদি কাছিমের ছেলে মনজুর আলম, মোঃ আলমের ছেলে আবু তাহের, মৌলভী বদিউজ্জামানের ছেলে করিম উল¬্যাহ, আব্দুল মালেকের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন, শফি আলমের স্ত্রী রহিমা খাতুন, মোঃ হোছনের ছেলে ভুলু, চোয়াংখালী জামে মসজিদের খতিব মৌলভী হাফেজ আব্দুস ছালাম, তার ছেলে আজিজুল ইসলাম সহ বেশ কিছু দালাল। এ ব্যাপরে মোবাইল ফোনে উক্ত কোরবান আলীর সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া অবস্থানরত তার ছেলের কথায় কিছু লোকদের সহায়তা করলেওে এখন সে মসজিদে পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ও তাবলীগে অংশ নিয়ে সময় কাটায়।
পাঠকের মতামত